রসুলপুর গ্রামের রাফিনা দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী । তার বাবা এলাকার একজন সুপরিচিত সবজি চাষি। তিনি নিজের জমিতে ঢেঁড়শ, টমেটো, শিম, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেন। জমিতে যখন সবজিগুলো বড় হয় তখন দেখতে বেশ সুন্দর লাগে। সবজিগুলো যখন বিক্রির জন্য তোলেন, গ্রামের অনেকে সেখান থেকেই সবজি কিনে নেন। বাকি সবজিগুলো তিনি ভালো করে ধুয়ে-মুছে বড় ডালিতে সুন্দর করে সাজিয়ে বাজারে নিয়ে যান। সবজিগুলো যাতে নষ্ট না হয় সে দিকেও তিনি খেয়াল রাখেন। রাফিনা সুযোগ পেলে এবং ছুটির দিনে তার বাবাকে সবজি বাগান পরিচর্যা ও সবজি উত্তোলনে সাহায্য করে। আশে- পাশের গ্রামের লোকেরাও তার সবজি পছন্দ করে কেনেন। তার বাবার সুনামের জন্য সে গর্ববোধ করে।
উপরে বর্ণিত রাফিনার বাবার সবজি উৎপাদন, সবজি সংরক্ষণ, ক্রেতাদের নিকট সবজি বিক্রি পর্যন্ত সকল কাজকে বিপণন বলা হয়। এ অধ্যায়ে আমরা বিপণনের ধারণা, কার্যাবলি, বিজ্ঞাপনসহ বিপণনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানব।
অধ্যায়টি পাঠ শেষে আমরা-
সাধারণ অর্থে পণ্য-দ্রব্য বা সেবা সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয়ের কাজকে বিপণন বলে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে বিপণনের ধারণা আরো ব্যাপক। পণ্য-দ্রব্য বা সেবা সামগ্রী উৎপাদনকারী থেকে ভোক্তা বা ব্যবহারকারীর নিকট পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত সকল কাজকে বিপণন বা বাজারজাতকরণ বলে গণ্য করা হয়। অর্থাৎ ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, গুদামজাতকরণ, প্রমিতকরণ, পর্যায়িতকরণসহ যাবতীয় কাজের সমষ্টি হলো বিপণন
আধুনিক ব্যবসায় ক্ষেত্রে বিপণনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ পণ্যের উৎপাদনের উপরই শুধু কোনো ব্যবসায় সংগঠনের সাফল্য নির্ভর করে না, যদি না সে পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে ভোক্তার কাছে পৌঁছানো যায়। বিপণনের মাধ্যমে ক্রেতা ও ভোক্তাগণ মানসম্মত পণ্য বা সেবা পেয়ে থাকে। কার্যকর বিপণন উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বিপণনের উন্নয়নের সাথে সাথে শিল্প, বাণিজ্য ও সেবার উন্নতি সাধিত হয়। এর ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।
বিপণন উৎপাদনকারী এবং ভোক্তার মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। বিপণনের মাধ্যমে পণ্য ও সেবার মালিকানাগত, স্থানগত ও সময়গত উপযোগ সৃষ্টি হয়। নিম্নে বিপণনের কাজগুলো বিশ্লেষণ করা হলো—
১. ক্রয় (Buying) : ক্রয় বিপণনের অন্যতম কাজ। নিজস্ব ব্যবহার বা পুনঃবিক্রয়ের জন্য পণ্য-দ্রব্যবা সেবা সামগ্রী ক্রয় করতে হয়। পণ্য-দ্রব্য বা সেবা সামগ্রী ক্রয়ের মাধ্যমে পণ্যের মালিকানা সৃষ্টি হয়।
২. বিক্রয় (Selling) : বিপণনের একটি আবশ্যকীয় কাজ হচ্ছে পণ্যের ক্রেতা ও বিক্রেতাকে একত্রিত করা। বিক্রয়ের মাধ্যমে পণ্যের মালিকানা হস্তান্তর হয়। পণ্য বা সেবার চাহিদা নির্ধারণ, ক্রেতা অনুসন্ধান, মূল্যনির্ধারণ বিক্রয়ের সাথে জড়িত।
৩. পরিবহন (Transportation) : পরিবহন পণ্য বা সেবার স্থানগত উপযোগ ও চাহিদা সৃষ্টি করে। এর মাধ্যমে পণ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছানো হয়। এভাবে পণ্য উৎপাদনকারী থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যবহারকারীর নিকট পৌঁছে। পরিবহনের কারণেই চীনের তৈরি বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস দ্রব্য-সামগ্রী আমরা ব্যবহার করতে পারছি। আবার আমাদের দেশের চিংড়ি মাছ ও চা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ ভোগ করতে পারছে।
৪. গুদামজাতকরণ (Warehousing) : গুদামজাতকরণের মাধ্যমে পণ্যের সময়গত উপযোগ সৃষ্টি হয়। বিপণনের সকল পর্যায়ে পণ্যসামগ্রী সংরক্ষণের প্রয়োজন হয়। অনেক পণ্য বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে উৎপাদিত হয় কিন্তু ব্যবহার হয় সারা বছর। বছরব্যাপী চাহিদা মেটানোর জন্য সে সকল পণ্য গুদামজাতকরণের মাধ্যমে সরক্ষণ করতে হয়। যেমন শীতকালে উৎপাদিত গোল আলু ও টমেটো সারা বছর আমরা গুদামজাতকরণের ফলেই পেয়ে থাকি ।
৫. প্রমিতকরণ (Standardizing) : প্রমিতকরণের মাধ্যমে পণ্যের গুণাগুণ, আকার, রং, স্বাদ ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে পণ্য মূল্য স্থির করা হয়। ফলে পণ্যের বিপণন প্রক্রিয়া সহজ হয় এবং বিক্রয় কার্যের গতিশীলতা বৃদ্ধি পায় ৷
৬. পর্যায়িতকরণ (Grading) : মান অনুযায়ী পণ্যকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করাকে পর্যায়িতকরণ বলা হয়। সাধারণত ওজন, আকার ও গুণাগুণ অনুযায়ী পর্যায়িতকরণ করা হয়। ফলে বিক্রয় সহজ হয়।
৭. মোড়কিকরণ (Packaging) : পণ্য সামগ্রীকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করা এবং নষ্ট বা ভেঙ্গে যাওয়া থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে কিছু দ্বারা আবৃত করাকে মোড়কিকরণ বলা হয়। শিল্পজাত পণ্য যেমন- ফ্রিজ, টেলিভিশন, সাবান এবং কৃষিজাত পণ্য যেমন- পাস্তুরিত দুধ, মাছ, মাংস ইত্যাদির বিক্রয় ও ক্রেতাদের নিকট গ্রহণযোগ্যতা মোড়কিকরণের উপর নির্ভর করে।
৮. তথ্য সংগ্ৰহ (Collection of Information) : পণ্য ও বাজার সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করাও বিপণনের কাজ। বাজারে কোন পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ কেমন, ক্রেতা ও ভোক্তাদের পছন্দ ও রুচি কেমন সে সম্পর্কে জানতে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়।
৯. ভোক্তা বিশ্লেষণ (Consumer Analysis) : বিপণনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে ভোক্তা বা ব্যবহারকারীর রুচি, চাহিদা, বৈশিষ্ট্য ও আগ্রহ বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করা। কারণ যথাযথভাবে এ কাজটি না করতে পারলে ব্যবসায়িক ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং প্রসার ব্যাহত হয়।
উৎপাদনকারী পণ্য উৎপাদন করার পর কখনো কখনো সরাসরি ভোক্তার নিকট বিক্রয় করে। কিন্তু সব সময় তার পক্ষে সরাসরি পণ্য বিক্রয় করা সম্ভব হয় না। প্রয়োজন হয় মধ্যস্থ ব্যবসায়ীর। মধ্যস্থ ব্যবসায়ীগণ উৎপাদক ও ভোক্তার মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। বিপণনের অংশ হিসেবে পণ্য ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মধ্যস্থ ব্যবসায়ী হিসেবে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীর সাহায্য নিতে হয়। যে প্রক্রিয়ায় পণ্য বা সেবা উৎপাদনকারী থেকে প্রকৃত ভোক্তা বা ব্যবহারকারীর হাতে পৌঁছে তাকে বণ্টন প্রণালী বলা হয়। যেমন চা বাগানে উৎপাদিত চা ভোক্তাগণ সরাসরি উৎপাদনকারী থেকে ক্রয় করে না। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে পাইকার চা ক্রয় করে। পাইকার থেকে ক্রয় করে খুচরা ব্যবসায়ী। খুচরা ব্যবসায়ী থেকে ভোক্তাগণ চা ক্রয় করে থাকে। এভাবেই উৎপাদনকারীর নিকট থেকে পণ্য বা সেবার মালিকানা একটি পথ ধরে গমন করে শেষ পর্যন্ত ভোক্তার নিকট পৌঁছে।
পণ্য বা সেবার ধরন ও বৈশিষ্ট্যের উপর বণ্টন প্রণালীর ধরন নির্ভর করে। নিম্নে বিভিন্ন প্রকার পণ্যের বণ্টন প্রণালী দেখানো হলো-
১. সরাসরি ভোক্তার নিকট বিক্রয় : কোনো ধরনের মধ্যস্থ ব্যবসায়ীর সাহায্য ছাড়াই উৎপাদনকারী সরাসরি ভোক্তার নিকট পণ্য বিক্রয় করলে তাকে সরাসরি বিপণন বলা হয়। কিছু কিছু কৃষিপণ্য যেমন- ধান, ফলমূল, সবজি এবং শিল্পজাত দ্রব্য যেমন- গুড়, চিনি ইত্যাদি সরাসরি ভোক্তার নিকট বিক্রয় করা হয়।
২. খুচরা ব্যবসয়ীর মাধ্যমে বিক্রয় : অনেক ক্ষেত্রে পণ্য বিক্রয় বা বণ্টনে মধ্যস্থ ব্যবসায়ী হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীর সাহায্য নেওয়া হয়। উৎপাদনকারীরা তাদের উৎপাদিত পণ্য নিজেরা ও খুচরা বিক্রেতার নিকট বিক্রয় করে। খুচরা ব্যবসায়ীগণ তাদের দোকানে পণ্য রেখে ভোক্তাদের নিকট চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করে থাকে। সাধারণত ধান, চাল, গোল আলু, সাবান, বিস্কুট, সেমাই ইত্যাদি এ পদ্ধতিতে বিক্রয় ও বণ্টন করা হয়। উৎপাদনকারী স্থানীয় হাট-বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীদের নিকট পণ্য বিক্রয় করে থাকে।বিভিন্ন প্রকার ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী যেমন- টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান এবং কৃষি উপকরণ যেমন সার, বীজ এ পদ্ধতিতে বিপণন হয়ে থাকে।
৫. প্রতিনিধি ও খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে বিক্রয় : উৎপাদনকারী দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়োজিত তাদের প্রতিনিধিদের ফরমায়েশ ও চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহ করে এবং এজেন্ট বা প্রতিনিধিগণ নিজস্ব পরিবহনের মাধ্যমে ঘুরে ঘুরে সে সকল সামগ্রী খুচরা ব্যবসায়ীদের নিকট সরবরাহ করে। ভোক্তাগণ এ সকল সামগ্রী খুচরা ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে কিনে থাকে। বিভিন্ন রকম কোমল পানীয় ও প্রসাধনী সামগ্রী আমাদের দেশে এ জাতীয় বণ্টন প্রণালীতে বিক্রয় হয়ে থাকে।
৩. পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীর মাধ্যমে বিক্রয় : এ পদ্ধতিতে উৎপাদনকারী তার উৎপাদিত পণ্য পাইকারের নিকট বিক্রয় করে এবং খুচরা ব্যবসায়ী সে পণ্য পাইকারের নিকট থেকে ক্রয় করে ভোক্তার নিকট বিক্রয় করে। যে সকল জায়গায় প্রচুর পরিমাণ কৃষিজাত পণ্য উৎপাদিত হয় সেখানে পাইকারগণ উপস্থিত হয়ে সে সকল পণ্যসামগ্রী ক্রয় করে থাকে। সাধারণত ধান, পাট, সরিষা, আম, কলা, বিভিন্ন রকম সবজি পাইকারি ব্যবসায়ীগণ ক্রয় করে থাকে। আবার বিভিন্ন স্থানে উৎপাদিত শিল্পজাত দ্রব্য সামগ্রী যেমন কাগজ, কলম ইত্যাদি পাইকার ক্রয় করে থাকেন। শেষ পর্যন্ত তা খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে ভোক্তাদের নিকট পৌছায় ৷
৪. প্রতিনিধি বা এজেন্টের মাধ্যমে বিক্রয় : উৎপাদনকারীগণ অনেক সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে এজেন্ট বা প্রতিনিধি নিয়োগ করে তাদের মাধ্যমে সরাসরি ভোক্তাদের নিকট শিল্প সামগ্রী বিক্রয় করে থাকে।
ছুটির পর ইফরান স্কুলের গেইটে একজন লোককে একটি কাগজ বিলি করতে দেখল। তাকেও একটি দিল। সেটিতে লেখা ছিল তাদের বাজারে নতুন একটি স্টেশনারি দোকান খুলতে যাচ্ছে। যেখানে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সবরকমের খাতা-পত্র, পেন-পেন্সিল, ব্যাগসহ অন্যান্য জিনিসপত্র সুলভমূল্যে পাওয়া যাবে। উদ্বোধন উপলক্ষে সকল ক্রেতাকে একটি করে রঙিন ক্যালেন্ডার উপহার হিসেবে দেওয়া হবে। বাসায় ফেরার পর তার বড় ভাইকে দেখালে তিনি বললেন এটি হচ্ছে একটি লিফলেট। ব্যবসায়িক প্রচারের জন্য এগুলো বিতরণ করা হয় ।
উপরের ঘটনায় স্টেশনারি দোকানের জন্য ক্রেতাসাধারণের উদ্দেশে প্রচারিত লিফলেটটি বিজ্ঞাপনের একটি মাধ্যম। বিজ্ঞাপন হচ্ছে পণ্য বা সেবা সামগ্রীর প্রতি জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য একটি উপায় বা কৌশল। প্রতিদিন আমরা টিভি, রেডিও ও পত্রিকায় বিভিন্ন পণ্যের আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দেখি ও শুনে থাকি। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে খুব সহজেই ক্রেতাসাধারণকে পণ্য ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ করা যায়। বিজ্ঞাপনের অন্যান্য মাধ্যম হচ্ছে লিফলেট, ম্যাগাজিন, পরিবহন, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, ইন্টারনেট ইত্যাদি।
বিজ্ঞাপনের বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে। সব ধরনের ব্যবসায় জন্য কিংবা সব ধরনের পণ্যের জন্য একই বিজ্ঞাপন মাধ্যম ব্যবহার করা হয় না। পণ্যের চাহিদা, গুণাগুণ, মূল্য ও ক্রেতাদের কথা বিবেচনা করে বিজ্ঞাপনের মাধ্যম নির্বাচন করতে হয়। নিম্নে বিভিন্ন প্রকার বিজ্ঞাপন মাধ্যম ও এদের প্রকৃতি তুলে ধরা হলো।
বিজ্ঞাপন মাধ্যম | ধরন |
সংবাদপত্র (Newspaper) | বিভিন্ন প্রকার দৈনিক ও সাপ্তাহিক সংবাদপত্রের বিভিন্ন পৃষ্ঠা ও নির্ধারিত পৃষ্ঠা |
সাময়িকী (Periodicals) | সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক ও বাৎসরিক সাময়িকী, ভোক্তা সাময়িকী, কৃষি সাময়িকী, মহিলা সাময়িকী, অর্থ সাময়িকী ইত্যাদি |
প্রচারপত্র (Circular Letter) | পণ্য সামগ্রীর গুণাগুণ, বৈশিষ্ট্য, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান উল্লেখপূর্বক মুদ্রিত প্রচারপত্র |
বিজ্ঞপনী ফলক (Hoarding) | গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও রাস্তার পাশে কাঠ বা হার্ডবোর্ডের বিজ্ঞাপনী ফলক |
প্রাচীরপত্র (Poster) | জনসাধারণের চলাফেরা যেখানে বেশি, সেখানের দেয়ালে সুন্দর সুন্দর ছবি ও লেখাযুক্ত প্রাচীরপত্র |
টেলিভিশন (Television) | টেলিভিশনে বিভিন্ন পণ্যের আকর্ষর্ণীয় দর্শন-শ্রবণযোগ্য স্লাইড |
রেডিও (Radio) | স্পট বিজ্ঞাপন, সৌজন্য বিজ্ঞাপন, বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন, জিঙ্গেল, জাতীয় বিজ্ঞাপন, আঞ্চলিক বিজ্ঞাপন |
চলচ্চিত্র (Cinema) | সিনেমা হলে ছবি শুরুর আগে, মধ্য বিরতিতে এবং শেষে স্লাইড প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপন |
পণ্যসজ্জা (Window Display) | সাধারণত কাঁচের গ্লাস দ্বারা বিভিন্ন রকমের পণ্য সাজিয়ে রাখা |
মেলা বা প্রদর্শনী (Fair/Exhibition) | বৈশাখী মেলা, শিল্প মেলা, বাণিজ্য মেলা, কুটির শিল্প মেলা, মীনাবাজার ইত্যাদিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রচার |
নমুনা (Sample) | ক্রেতাকে বিভিন্ন রকম নমুনা প্রদান। সাধারণত ঔষধ কোম্পানি, পুস্তক | বিক্রেতা ও প্রসাধন সামগ্রীর নমুনা বিতরণ করা |
নিয়ন আলো (Neon sign) | শহরের কর্মস্থল ও জনবহুল এলাকায় বৈদ্যুতিক নিয়ন আলোর মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যদ্রব্যের আলোকসজ্জা। |
পরিবহন বিজ্ঞাপন (Car Advertising) |
বিভিন্ন যাত্রীবাহী বা পণ্যবাহী গাড়িতে বিজ্ঞাপন প্রচার। চলচ্চিত্র, সাবান, সিগারেট, কোমল পানীয়ের জন্য পরিবহন বিজ্ঞাপন ব্যবহার। |
অন্যান্য | ব্যানার, ফ্যাস্টুন, সাইনবোর্ড, স্টিকার, গ্যাস বেলুন, আকাশ বিজ্ঞাপন |
বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক যুগে ছোট, মাঝারি, বড় যে কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পণ্য সামগ্রীর বিপণনের জন্য বিজ্ঞাপন খুবই কার্যকর মাধ্যম। নিম্নে বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করা হলো :
১. বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পণ্যের মান, মূল্য ও ব্যবহারবিধি ক্রেতা বা জনসাধারণের কাজে তুলে ধরা হয় । ফলে চাহিদা বৃদ্ধি পায়, উৎপাদন ও বিক্রয়ের পরিমাণ বাড়ে এবং মুনাফা বৃদ্ধি পায় ৷
২. বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্যবসায়ের সুনাম বৃদ্ধি পায় যা ব্যবসায়ের একটি বড় সম্পদ। সুনাম বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ের প্রসার হয়। আবার ব্যবসায়ের সুনাম ধরে রাখার ক্ষেত্রেও বিজ্ঞাপন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৩. বিজ্ঞাপন পণ্যের প্রচারে গতিশীলতা আনে। পণ্যের চাহিদা, বিক্রয় ও মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং দেশের জাতীয় আয় বাড়ে।
৪. বিজ্ঞাপনে পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি হয় এবং ব্যবসায়ীরা সে চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার চেষ্টা করে। চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপিত হয় এবং পণ্য বা সেবার মূল্যের স্থিতিশীলতা আসে।
৫. বিজ্ঞাপনের প্রভাবে পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হয় এবং ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পায় ও বেকার সমস্যার সমাধান হয়।
৬. বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জনসাধারণ নতুন নতুন পণ্য ও সেবা সামগ্রী সম্পর্কে জানতে পারে। এতে তাদের মধ্যে ভোগ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। মানসম্মত পণ্য ভোগ করার মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয় ।
৭. বিজ্ঞাপন সামাজিক ও নৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি করে যা সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। উদাহরণ স্বরূপ-পণ্যের দোষ-গুণ সম্পর্কে সচেতনতা, ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা, এইডস সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনের ভূমিকা রয়েছে।
৮. বিজ্ঞাপন জনসাধারণের জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করে দেশীয় পণ্য ব্যবহার ও ক্রয়ে ভূমিকা রাখে। স্বদেশী পণ্য কিনে হউন ধন্য' জাতীয় বিজ্ঞাপন দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধকে লালন করতে উৎসাহ যোগায় ৷
বিক্ৰয়িকতা বলতে বিক্রয়কর্মীর ক্রেতা আকর্ষণ করার কৌশল বা দক্ষতাকে বোঝায় যার মাধ্যমে সে সম্ভাব্য ক্রেতার নিকট পণ্য বা সেবা সামগ্রী বিক্রয় করতে সক্ষম হয়। বিক্রয়িকতার গুণে বিক্রেতা তার ব্যবসায় ও পণ্য সম্পর্কে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করে তাদেরকে স্থায়ী গ্রাহকে পরিণত করে।
বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিক্রয় প্রসার ও সফলতা অর্জনে বিক্রয়কর্মীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ের সফলতা ও ব্যর্থতা একজন বিক্রয়কর্মী দ্বারা প্রভাবিত হয়। ক্রেতা ও ভোক্তাদের আকৃষ্ট ও প্রভাবিত করে স্থায়ী গ্রাহকে পরিণত করতে হলে একজন বিক্রয়কর্মীকে অনেকগুলো গুণের অধিকারী হতে হয়। নিম্নে একজন আদর্শ বিক্রয়কর্মীর গুণাবলি বিশ্লেষণ করা হলো।
শারীরিক গুণাবলি |
১. সুদর্শন চেহারা : একজন বিক্রয়কর্মী সুন্দর ও আকর্ষণীয় হলে সে সহজেই ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। ২. সুস্বাস্থ্য : একজন বিক্রয়কর্মীকে অবশ্যই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হয়। কারণ সুস্বাস্থ্য গ্রাহকদেরকে আকৃষ্ট করে। ৩. সুন্দর হাসি : বিক্রয়কর্মীর হাসিমাখা মুখ ক্রেতাদেরকে বাড়তি অনুপ্রেরণা দেয় । |
মানসিক গুণাবলি |
৪. আগ্রহ ও আন্তরিকতা : একজন আদর্শ বিক্রয়কর্মীকে তার কাজের প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকতে হয়। ক্রেতাদের প্রতি আন্তরিকতা ও নিজ পেশার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ব্যবসায়ের সুনাম বৃদ্ধি করে। ৫.আত্মবিশ্বাস : বিক্রয়কর্মীকে অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী হতে হবে যাতে সে তার দোকানেরপণ্য ৭. ধৈর্যশীলতা : একজন বিক্রয়কর্মীকে অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে। |
নৈতিক গুণাবলি |
৮. সততা ও বিশ্বস্ততা : একজন বিক্রয়কর্মীকে অবশ্যই তার কাজে ও গ্রাহকদের সাথে লেনদেনে সততা ও বিশ্বস্ততার পরিচয় দিতে হবে। সততা ও বিশ্বস্ততা ক্রেতাদেরকে স্থায়ী গ্রাহকে পরিণত করে। ১০. মেলামেশার ক্ষমতা : একজন বিক্রয়কর্মীর মধ্যে ক্রেতাদের সাথে সহজে মেশার গুণ থাকা উচিত যাতে সে সহজেই ক্রেতাদের আপন করে নিতে পারে এবং স্থায়ী গ্রাহকে পরিণত করতে পারে। ১১. জেন্ডার সচেতনতা : নারী-পুরুষ, ছেলে-মেয়ে এবং বয়স্ক ক্রেতাদের সাথে কেমন ব্যবহার করা উচিত সে সম্পর্কে সচেতন বিক্রয়কর্মীর সচেতন থাকা উচিত। |
অন্যান্য গুণাবলি |
১৩. শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা : একজন আদর্শ বিক্রয়কর্মীর অবশ্যই প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা থাকা উচিত যাতে সে ব্যবসায়ের বিভিন্ন জ্ঞান প্রয়োজনে কাজে লাগাতে পারে। ১৪. বিপণন সম্পর্কে জ্ঞান : একজন বিক্রয়কর্মীর পণ্য বিপণনের সাথে জড়িত বিভিন্ন কাজ যেমন পণ্য নির্বাচন, পণ্য সংগ্রহ, মূল্য নির্ধারণ, পর্যায়িতকরণ, প্যাকিং সম্পর্কে জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা উচিত। ১৫. হিসাবে পারদর্শিতা : একজন আদর্শ বিক্রয়কর্মীর অবশ্যই পণ্যের মূল্য নির্ধারণ ও হিসাবরক্ষণের কৌশল সম্পর্কে দক্ষতা ও জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয় । |